অভিনেতা হিসেবে মীর সাব্বির কেমন!
এই প্রশ্নের উত্তর বয়সভেদে নানারকম হতে পারে। যেমন যাদের বয়স এখনো কুড়ি পেরোয় নি,পুরনো নাটকের প্রতি আগ্রহ কম৷ তাদের কাছে মীর সাব্বির মানেই বরিশালের ভাষায় কথা বলা নোয়াশাল কিংবা বাপ বেটা সেম সাইড নাটকের অভিনেতা। অনেকের কাছেই এগুলো কমেডির নামে ভাঁড়ামি৷ আবার যারা বয়সে একটু বড়,বিটিভির নাটক দেখে বড় হয়েছে৷ তাদের কাছে মীর সাব্বির একজন ভালো অভিনেতা,যার বহু নাটক দেখেছে৷ তবে রয়েছে আফসোস!
সেই পুরনো মীর সাব্বির কে যেন দেখা গেল 'রাত জাগা ফুল' সিনেমায়। একজন এতিম পাগলাটে চরিত্রে মীর সাব্বিরের ডেডিকশন প্রশংসা করবার মত। যারা উনার কাছে ভালো অভিনয় দেখার অপেক্ষায় থাকেন,তাদের জন্যই এই ছবি,আবার যারা একটু নাক কুঁচকান তাদের মত পরিবর্তনের জন্য এই ছবি দেখা উচিত। মীর সাব্বির নিজেই নির্মান করেছেন 'রাত জাগা ফুল'। সরকারী অনুদানের নির্মিত এই ছবির গল্প রইসকে কেন্দ্র করে। প্রানীদের প্রতি তার ভীষণ ভালোবাসা,তাদের ঘিরেই গল্প। গ্রাম্য রাজনীতির কুফল কিংবা শহুরের কুৎসিত দিক দুটোই এসেছে এই ছবিতে। রাতে সবাই ঘুমায় নাই,কেউ কেউ জেগে থেকে পৃথিবী দেখে তারাই রাত জাগা ফুল।
প্রথম নির্মাণ হলেও মীর সাব্বিরের নির্মাণ জ্ঞান চমৎকার,সংলাপ ও বেশ জোরালো। চোখ জুড়িয়েছে মনিরুল ইসলাম মাসুমের অনিন্দ্যসুন্দর সিনেমাটোগ্রাফি। আবুল হায়াত,ফজলুর রহমান বাবু,জয়রাজ তিনজন ই বেশ আলোকিত হয়েছে,নতুন নায়িকা তাসনিয়া,শাহেদ শাহরিয়ার বেশ ভালো। সৌন্দর্য কন্যা ঐশীর উপস্থিতি মন ভালো করে দিবে। তানভীরের অবশ্য তেমন কিছু করার ছিল না। চমকপ্রদ হয়েছি অতিথিশিল্পীর উপস্থিতিতে,আমি নিশ্চিত যে কেউই বিস্মিত হবেন।
ভালোর যেমন অন্ত নেই,তেমনি এই ছবি বলার মত ভালো হলেও আরো ভালো হতে পারতো। বিশেষ করে প্রথম অংশ খুব দুর্দান্ত হওয়ায় দ্বিতীয় অংশের জন্য প্রত্যাশা বেড়ে গিয়েছিল,সেখানে গিয়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে ছবিটা। সিনেমার মাধ্যমে তিনি সামাজিক বার্তা দিতে চেয়েছেন দর্শকদের,যাতে সচেতন হয়। সেইদিক থেকে আশা করি ছবিটা প্রভাব ফেলতে পারে।
সবশেষে গান,এই ছবির সেরা প্রাপ্তির একটা। ইমন চৌধুরীর সংগীতায়োজন মুগ্ধ করবার মত,সবগুলো গান লিখেছেন স্বয়ং মীর সাব্বির,এই প্রতিভা জারি থাকুক। শফি মন্ডল,রাহুল আনন্দ,হৃদয় খান থেকে নচিকেতার গান সবগুলোই মুগ্ধ করবে,বলা ভালো কোনোটার ই অপব্যবহার হয় নি। সিনেমার একেবারে শেষে যখন মমতাজের কন্ঠে যখন রাত জাগা ফুল ফোটে গান বেজে উঠে,তখন সত্যিই মন অন্যরকম করে দেয়।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারেও ছবিটি হবে যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী, এটা বলাই যায়। আজ মুক্তি পাওয়া এই ছবি দেখে আসতে পারেন সিনেমা হলে।